শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
নতুন আইন বাস্তবায়নের বিকল্প নেই

নতুন আইন বাস্তবায়নের বিকল্প নেই

২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস হওয়ার এক বছরের বেশি সময় পর ১ নভেম্বর কার্যকর করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে কঠোর আইন হলেও এর সুফল বা ইতিবাচক প্রভাব পরিবহন খাতে এখনো পড়েনি। নভেম্বরে মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে যানবাহনের ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স-সংক্রান্ত কিছু ধারা আগামী জুন পর্যন্ত প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর মধ্যে যানবাহন ও চালকের প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র হালনাগাদের পরামর্শ দেয়া হয়। এর জন্য জরিমানা মওকুফ, প্রক্রিয়া সহজতর করাসহ মালিক-শ্রমিকদের নানা সুবিধাও দেয়া হয়। এই বিশেষ সুবিধা আগামী চার মাসের মধ্যে শেষ হবে। এখনো আইনের বিধিমালা হয়নি। আইন প্রয়োগে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়নি। অথচ পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা নিয়ে সমাজের সব স্তরেই উদ্বেগ রয়েছে। নতুন সড়ক আইনে কঠোর শাস্তির বিধান থাকায় সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। প্রত্যাশা ছিল, কঠোর শাস্তির মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা আসবে, কমবে প্রাণহানি ও দুর্ঘটনা। কিন্তু মালিক-শ্রমিকদের দাবির মুখে ছাড় দেয়ায় গতি কমেছে। গত বছর সড়কে প্রাণহানি ও দুর্ঘটনা দু’টিই বেড়েছে। নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) হিসাবে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় পাঁচ হাজার ২২৭ জন। ২০১৮ সালে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল চার হাজার ৪৩৯। এক বছরের ব্যবধানে প্রাণহানির হার বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়েছে এক হাজার ৫৫৯টি।
নতুন আইন বাস্তবায়নে যেখানে সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক অবস্থান প্রয়োজন ছিল; সেখানে নমনীয়তা দেখানোয় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরার পরিবর্তে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। কঠোর শাস্তির ভয়ে চালকরা লাইসেন্স সংগ্রহ করবেÑ এমনটা ভাবা হলেও বাস্তবে হয়েছে বিপরীত। নতুন লাইসেন্স সংগ্রহ ও পুরনো লাইসেন্স নবায়নের আবেদন কমেছে। বেড়েছে ফিটনেসবিহীন যানবাহনও। আইন অমান্যের দায়ে জরিমানা আদায় ও সাজার পরিমাণ বেশ কমেছে। বিআরটিএর তথ্যমতে, সড়ক আইন কার্যকরের আগে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ছিল চার লাখ তিন হাজার ৫৩৩টি। ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেড়ে হয়েছে চার লাখ ৪৩ হাজার ৪৩২টি। অর্থাৎ ফিটনেসবিহীন যানবাহন বেড়েছে ৩৯ হাজার ৮৯৯টি। আইন প্রয়োগে কঠোরতার বদলে শিথিলতা দেখানোয় গণপরিবহনের মালিকরা আরো সাহসী হয়ে উঠেছে।
বিআরটিএর হিসাবে, দেশে যানবাহন আছে সাড়ে ৪৩ লাখ। চালক আছে ২৮ লাখের মতো। প্রায় ১৫ লাখ যানবাহনের চালক নেই। হালকা যানের চালকরা বাস-ট্রাক চালাচ্ছে। কারো আবার লাইসেন্সই নেই। নতুন সড়ক আইনে এই অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। লাইসেন্স-সংক্রান্ত ধারার শাস্তি জুন পর্যন্ত স্থগিতের পরও সাড়া না মেলায় ২ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে প্রক্রিয়া শিথিল করা হয়েছে। ফলে এক বছরের অভিজ্ঞ চালকরা হালকা থেকে মাঝারি এবং মাঝারি থেকে ভারী যানের লাইসেন্স পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অথচ আইনে মাঝারি যানের লাইসেন্স পেতে তিন বছর এবং ভারী যানের পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে।
সূত্রমতে, গত নভেম্বরে নতুন লাইসেন্সের আবেদন পড়ে ৩৭ হাজার। ওই মাসে নবায়ন ও লাইসেন্সের শ্রেণী পরিবর্তনের আবেদন পড়ে ৯ হাজার। জানুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় সোয়া ২১ হাজারে। লাইসেন্স নবায়ন ও শ্রেণী পরিবর্তনের সংখ্যাও কমে হয় সোয়া সাত হাজার। এ দিকে পুলিশ গত অক্টোবরে সারা দেশে পরিবহনসংক্রান্ত মামলা করে তিন লাখ ৫২ হাজার। জরিমানা আদায় করে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। সড়ক আইন কার্যকরের পর নভেম্বরে মামলা হয় ৬০ হাজার। জরিমানা আদায় হয় সাড়ে চার কোটি টাকা। ডিসেম্বরে মামলা আরো কমে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার। জরিমানা আদায় হয় এক কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে সরকারের পূর্ণ মনোযোগ না থাকলে এ থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা নেই। সরকারের মধ্যে সেই মনোযোগ দেখা যাচ্ছে না। পরন্তু আইন প্রয়োগের প্রস্তুতি ও অবকাঠামোর অভাব স্পষ্ট। পরিবহনমালিক-শ্রমিকরা অতীতে দেখেছে, সরকার কখনো কঠোর, কখনো নরম আচরণ করে। সরকার কঠোর হলে তারা আন্দোলনে নামে, নরম হলে বিশৃঙ্খলায় ফিরে যায়। তাই শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে নতুন আইন বাস্তবায়নে কোনো ছাড় দেয়ার অবকাশ নেই।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877